সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মৃত স্বামীর ঋণের দায়ে স্ত্রী কারাগারে : দুই বিচারক কে হাইকোর্টে তলব

  • Reporter Name
  • Update Time : ০১:৪৯:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ৮২ Time View

মৃত স্বামীর ঋণের দায়ে তিন এতিম শিশু সন্তানের মাকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় ফরিদপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এম এ সাঈদ ও অর্থঋণ আদালতের বিচারক এ কে এম রফিকুল হাসানকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ব্র্যাক ব্যাংক ফরিদপুরের বোয়ালমারী শাখার ব্যবস্থাপককেও তলব করা হয়েছে। আগামী ৬ মার্চ তাদের সশরীরে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি কাজী ওয়ালিউল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। তিন শিশু সন্তানের মা পপি খাতুনকে জামিন দিয়ে আদালত এ আদেশ দিয়েছেন।

সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জামিউল হক ফয়সাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গত ২৭ জানুয়ারি পত্রিকায় মৃত স্বামীর ঋণের দায়ে স্ত্রী কারাগারে, মামলার আসামি এতিম তিন শিশু সন্তান ঘুরছে দ্বারে দ্বারে— শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়,ফরিদপুরের বোয়ালমারী পৌর সদরের পোল্ট্রি মুরগি ব্যবসায়ী মৃত আমিন শেখ ও পপি খাতুন দম্পতির তিন শিশু সন্তান আইরিন (১০), আহমাদুল্লাহ (৫) ও জানাতুন নাঈমা (৪)। নাবলক এতিম তিন শিশু বাবার ঋণের দায়ে ব্র্যাক ব্যাংকের দায়ের করা অর্থ ঋণের মামলার আসামি। মা পপি খাতুন জেলে যাওয়ার পর থেকেই একই মামলার আসামি তিনটি এতিম শিশু সারাক্ষণ শঙ্কা ও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে, কখন জানি তাদেরও পুলিশ ধরে নিয়ে যায়।

২৬ জানুয়ারি বিকেলে পৌরসদরের অডিটোরিয়াম এলাকায় এ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

এলাকাবাসী ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, স্বামী আমিন শেখের নেওয়া ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় পপি খাতুন বর্তমানে কারাগারে। বাবা নেই, মা কারাগারে। এতিম তিনটি শিশুর জীবন এখন বিষাদে ভরা, যন্ত্রণা কাতর। ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে মা পপি খাতুন জেলে যাওয়ার পর তাদের নানা উপজেলার ময়না ইউনিয়নের বান্দুগ্রামের বাসিন্দা সিরাজ শেখের বাড়িতে আশ্রয়ে রয়েছে অবুঝ শিশুরা। দিনমজুর নানা সিরাজ শেখের নিজের সংসারই ঠিকমতো চলে না তার ওপর যুক্ত হয়েছে এতিম নাবালক তিন নাতি-নাতনি। দিশেহারা নানা তাই এতিম শিশুদের নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।

সংবাদ সম্মেলনে শিশুদের নানা সিরাজ শেখ বলেন, আমার মেয়ের জামাই আমিন শেখ বোয়ালমারী বাজারের পোল্ট্রি মুরগী ব্যবসায়ী ছিলেন। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর পর জানতে পারি তিনি ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি বোয়ালমারী শাখা থেকে ২০২২ সালের ২৫ অক্টোবর ৩০ লাখ টাকা  ঋণ নেন।

পপি খাতুনের আত্মীয় হুমায়ুন কবির বলেন, অসহায় এতিম তিনটি শিশু, যারা এখনো ঠিকমতো টাকা, ঋণ, লেনদেনের অর্থই বোঝে না। বয়স লুকিয়ে তাদেরও করা হয়েছে আসামি। এরা নাকি জামিনদার হয়েছিলো। এরা ঋণের কী বোঝে। আদালতের নিকট আবেদন মৃত ঋণ গ্রহীতার অসহায় ওয়ারিশদের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে ঋণ মওকুফ করে তাদের বেকসুর খালাস দেওয়া হোক। তাদের জায়গা-জমি বলতে কিছুই নেই।

ব্র্যাক ব্যাংক বোয়ালমারী শাখার ব্যবস্থাপক রাসেল আহমেদ  বলেন, ঋণ গ্রহীতা মৃত আমিন শেখ ত্রিশ লাখ টাকা ঋণ নেন। ব্যাংকের শর্ত ও নিয়মের মধ্যে থেকেই চলমান ব্যবসার অনুকূলে ঋণ দেওয়া হয়েছে। শর্তাবলি মেনেই ঋণের টাকা অনাদায়ে জামিনদার ও ওয়ারিশগণের নামে মামলা হয়েছে। এতিম নাবালক শিশুদের নামে মামলার বিষয়ে আমাদের আইনজীবী ভালো বলতে পারবেন।

এ বিষয়ে বিবাদী পক্ষের আইনজীবী এ্যাড. মেহেদী হাসান বলেন, ঋণ গ্রহীতা আমিন শেখের অবুঝ শিশুদের এ মামলায় ওয়ারিশ সূত্রে আসামি করা ঠিক হয়নি। তারা ওয়ারিশ হলেও প্রাপ্ত বয়সের আগে তারা বাবার সম্পত্তির অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। শিশুদের বিরুদ্ধে মামলা করে নিঃসন্দেহে তারা প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। আদালতকে ভুল তথ্য দিয়েছেন। এটা নিঃসন্দেহে আদালত অবমাননার শামিল বলেও তিনি জানান।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Tavir Rahman

জনপ্রিয়

গাইবান্ধায় মিথ্যা মামলা ও হয়রানির প্রতিবাদে মানববন্ধন

মৃত স্বামীর ঋণের দায়ে স্ত্রী কারাগারে : দুই বিচারক কে হাইকোর্টে তলব

Update Time : ০১:৪৯:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

মৃত স্বামীর ঋণের দায়ে তিন এতিম শিশু সন্তানের মাকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় ফরিদপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এম এ সাঈদ ও অর্থঋণ আদালতের বিচারক এ কে এম রফিকুল হাসানকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ব্র্যাক ব্যাংক ফরিদপুরের বোয়ালমারী শাখার ব্যবস্থাপককেও তলব করা হয়েছে। আগামী ৬ মার্চ তাদের সশরীরে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি কাজী ওয়ালিউল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। তিন শিশু সন্তানের মা পপি খাতুনকে জামিন দিয়ে আদালত এ আদেশ দিয়েছেন।

সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জামিউল হক ফয়সাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গত ২৭ জানুয়ারি পত্রিকায় মৃত স্বামীর ঋণের দায়ে স্ত্রী কারাগারে, মামলার আসামি এতিম তিন শিশু সন্তান ঘুরছে দ্বারে দ্বারে— শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়,ফরিদপুরের বোয়ালমারী পৌর সদরের পোল্ট্রি মুরগি ব্যবসায়ী মৃত আমিন শেখ ও পপি খাতুন দম্পতির তিন শিশু সন্তান আইরিন (১০), আহমাদুল্লাহ (৫) ও জানাতুন নাঈমা (৪)। নাবলক এতিম তিন শিশু বাবার ঋণের দায়ে ব্র্যাক ব্যাংকের দায়ের করা অর্থ ঋণের মামলার আসামি। মা পপি খাতুন জেলে যাওয়ার পর থেকেই একই মামলার আসামি তিনটি এতিম শিশু সারাক্ষণ শঙ্কা ও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে, কখন জানি তাদেরও পুলিশ ধরে নিয়ে যায়।

২৬ জানুয়ারি বিকেলে পৌরসদরের অডিটোরিয়াম এলাকায় এ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

এলাকাবাসী ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, স্বামী আমিন শেখের নেওয়া ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় পপি খাতুন বর্তমানে কারাগারে। বাবা নেই, মা কারাগারে। এতিম তিনটি শিশুর জীবন এখন বিষাদে ভরা, যন্ত্রণা কাতর। ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে মা পপি খাতুন জেলে যাওয়ার পর তাদের নানা উপজেলার ময়না ইউনিয়নের বান্দুগ্রামের বাসিন্দা সিরাজ শেখের বাড়িতে আশ্রয়ে রয়েছে অবুঝ শিশুরা। দিনমজুর নানা সিরাজ শেখের নিজের সংসারই ঠিকমতো চলে না তার ওপর যুক্ত হয়েছে এতিম নাবালক তিন নাতি-নাতনি। দিশেহারা নানা তাই এতিম শিশুদের নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।

সংবাদ সম্মেলনে শিশুদের নানা সিরাজ শেখ বলেন, আমার মেয়ের জামাই আমিন শেখ বোয়ালমারী বাজারের পোল্ট্রি মুরগী ব্যবসায়ী ছিলেন। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর পর জানতে পারি তিনি ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি বোয়ালমারী শাখা থেকে ২০২২ সালের ২৫ অক্টোবর ৩০ লাখ টাকা  ঋণ নেন।

পপি খাতুনের আত্মীয় হুমায়ুন কবির বলেন, অসহায় এতিম তিনটি শিশু, যারা এখনো ঠিকমতো টাকা, ঋণ, লেনদেনের অর্থই বোঝে না। বয়স লুকিয়ে তাদেরও করা হয়েছে আসামি। এরা নাকি জামিনদার হয়েছিলো। এরা ঋণের কী বোঝে। আদালতের নিকট আবেদন মৃত ঋণ গ্রহীতার অসহায় ওয়ারিশদের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে ঋণ মওকুফ করে তাদের বেকসুর খালাস দেওয়া হোক। তাদের জায়গা-জমি বলতে কিছুই নেই।

ব্র্যাক ব্যাংক বোয়ালমারী শাখার ব্যবস্থাপক রাসেল আহমেদ  বলেন, ঋণ গ্রহীতা মৃত আমিন শেখ ত্রিশ লাখ টাকা ঋণ নেন। ব্যাংকের শর্ত ও নিয়মের মধ্যে থেকেই চলমান ব্যবসার অনুকূলে ঋণ দেওয়া হয়েছে। শর্তাবলি মেনেই ঋণের টাকা অনাদায়ে জামিনদার ও ওয়ারিশগণের নামে মামলা হয়েছে। এতিম নাবালক শিশুদের নামে মামলার বিষয়ে আমাদের আইনজীবী ভালো বলতে পারবেন।

এ বিষয়ে বিবাদী পক্ষের আইনজীবী এ্যাড. মেহেদী হাসান বলেন, ঋণ গ্রহীতা আমিন শেখের অবুঝ শিশুদের এ মামলায় ওয়ারিশ সূত্রে আসামি করা ঠিক হয়নি। তারা ওয়ারিশ হলেও প্রাপ্ত বয়সের আগে তারা বাবার সম্পত্তির অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। শিশুদের বিরুদ্ধে মামলা করে নিঃসন্দেহে তারা প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। আদালতকে ভুল তথ্য দিয়েছেন। এটা নিঃসন্দেহে আদালত অবমাননার শামিল বলেও তিনি জানান।