মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৬৬ বছরের বৃদ্ধকে বিয়ে করলো ২২ বছরের তরুণী

  • Reporter Name
  • Update Time : ০১:৫৫:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫
  • ১০২ Time View

ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি নববধূর মুখে মিষ্টি তুলে দিচ্ছেন। কনের লাজুক মুখে শঙ্কা আর সাহসের ছাপ। এই দৃশ্য দেখে অনেকেই ভ্রু কুঁচকিয়েছেন, কেউ চোখ গোল করেছেন। কারণ, এই নবদম্পতির বয়সের পার্থক্য ৪৪ বছর!

র শরিফুল ইসলাম প্রধানের বাড়ি লালমনিরহাটের পাটগ্রাম পৌরসভার দক্ষিণ কোর্টতলি রসুলগঞ্জ এলাকায়। আর কনে আইরিন আক্তার একই উপজেলার কুচলিবাড়ি ইউনিয়নের নজরুল ইসলামের মেয়ে। গত ২২ মার্চ তাদের বিয়ে হয়। মোহরানা করা হয় ১০ লাখ টাকা। তাদের বিয়ের খবরটি মুহূর্তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

রংপুরের একটি নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থী আইরিনের বয়স এখন ২২ বছর। স্কুলে থাকাকালীন তার সঙ্গে শরিফুলের পরিচয় হয়। শরিফুলের বয়স এখন ৬৬ বছর।

আইরিন বলেন, “আমার পরিবারের অবস্থা ভালো ছিল না। চতুর্থ শ্রেণী থেকে উনিই (শরিফুল) আমাকে সহায়তা করে আসছেন। পড়াশোনার খরচ, বই, এমনকি কলেজে ভর্তি সবই উনি সামলেছেন। শরিফুল এতটাই দায়িত্ব নিয়ে পাশে ছিলেন যে, আমার পড়াশোনা যাতে থেমে না যায় সেজন্য তিনি ব্যাংকে ছয় লাখ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করেছিলেন। ওই টাকা দিয়েই চলছিল আমার পড়াশোনা।”

এ তরুণী বলেন, “একটা সময় পরিবার আমার বিয়ের চিন্তা শুরু করে। আমার মনে ভয় ছিল, বিয়ের পর হয়তো পড়াশোনা থেমে যাবে। হয়তো কেউই আমারে এমনভাবে বুঝবে না, পাশে থাকবে না যেভাবে শরিফুল থেকেছেন। তখনই মনে হলো, যার সঙ্গে আমি সব সময় নির্ভার থাকতে পেরেছি তিনি-ই যদি আমার জীবনসঙ্গী হন, তাহলে আমার স্বপ্নগুলো বেঁচে থাকবে।”

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথমে শরিফুল রাজি ছিলেন না। আইরিনের প্রস্তাবে অবাক হয়েছিলেন, ছিলেন দ্বিধায়। কিন্তু আইরিনের দৃঢ়তা আর আন্তরিকতা তাকে টেনে আনে বিয়ের পিঁড়ি পর্যন্ত। শেষ পর্যন্ত পারিবারিক সম্মতিতে তাদের বিয়ে হয়। কিন্তু আইরিন আর শরিফুলের বিয়ের ছবি, ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।

পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মামুন হোসেন সরকার বলেন, “বিয়ে-শাদির জন্য বয়স কোনো ব্যাপার না। মনটাই বড় কথা। এখানে তাদের বিয়ে নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বললেও আমি মনে করি শরিফুলের প্রতি আইরিনের শ্রদ্ধা সব সমালোচনাকে হার মানিয়েছে।”

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Farhan Shekh

জনপ্রিয়

৬৬ বছরের বৃদ্ধকে বিয়ে করলো ২২ বছরের তরুণী

Update Time : ০১:৫৫:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫

ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি নববধূর মুখে মিষ্টি তুলে দিচ্ছেন। কনের লাজুক মুখে শঙ্কা আর সাহসের ছাপ। এই দৃশ্য দেখে অনেকেই ভ্রু কুঁচকিয়েছেন, কেউ চোখ গোল করেছেন। কারণ, এই নবদম্পতির বয়সের পার্থক্য ৪৪ বছর!

র শরিফুল ইসলাম প্রধানের বাড়ি লালমনিরহাটের পাটগ্রাম পৌরসভার দক্ষিণ কোর্টতলি রসুলগঞ্জ এলাকায়। আর কনে আইরিন আক্তার একই উপজেলার কুচলিবাড়ি ইউনিয়নের নজরুল ইসলামের মেয়ে। গত ২২ মার্চ তাদের বিয়ে হয়। মোহরানা করা হয় ১০ লাখ টাকা। তাদের বিয়ের খবরটি মুহূর্তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

রংপুরের একটি নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থী আইরিনের বয়স এখন ২২ বছর। স্কুলে থাকাকালীন তার সঙ্গে শরিফুলের পরিচয় হয়। শরিফুলের বয়স এখন ৬৬ বছর।

আইরিন বলেন, “আমার পরিবারের অবস্থা ভালো ছিল না। চতুর্থ শ্রেণী থেকে উনিই (শরিফুল) আমাকে সহায়তা করে আসছেন। পড়াশোনার খরচ, বই, এমনকি কলেজে ভর্তি সবই উনি সামলেছেন। শরিফুল এতটাই দায়িত্ব নিয়ে পাশে ছিলেন যে, আমার পড়াশোনা যাতে থেমে না যায় সেজন্য তিনি ব্যাংকে ছয় লাখ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করেছিলেন। ওই টাকা দিয়েই চলছিল আমার পড়াশোনা।”

এ তরুণী বলেন, “একটা সময় পরিবার আমার বিয়ের চিন্তা শুরু করে। আমার মনে ভয় ছিল, বিয়ের পর হয়তো পড়াশোনা থেমে যাবে। হয়তো কেউই আমারে এমনভাবে বুঝবে না, পাশে থাকবে না যেভাবে শরিফুল থেকেছেন। তখনই মনে হলো, যার সঙ্গে আমি সব সময় নির্ভার থাকতে পেরেছি তিনি-ই যদি আমার জীবনসঙ্গী হন, তাহলে আমার স্বপ্নগুলো বেঁচে থাকবে।”

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথমে শরিফুল রাজি ছিলেন না। আইরিনের প্রস্তাবে অবাক হয়েছিলেন, ছিলেন দ্বিধায়। কিন্তু আইরিনের দৃঢ়তা আর আন্তরিকতা তাকে টেনে আনে বিয়ের পিঁড়ি পর্যন্ত। শেষ পর্যন্ত পারিবারিক সম্মতিতে তাদের বিয়ে হয়। কিন্তু আইরিন আর শরিফুলের বিয়ের ছবি, ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।

পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মামুন হোসেন সরকার বলেন, “বিয়ে-শাদির জন্য বয়স কোনো ব্যাপার না। মনটাই বড় কথা। এখানে তাদের বিয়ে নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বললেও আমি মনে করি শরিফুলের প্রতি আইরিনের শ্রদ্ধা সব সমালোচনাকে হার মানিয়েছে।”