রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিশ্বজুড়ে নারকেলের সংকট, দাম দ্বিগুণ

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৫:৫১:৪৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫
  • ৪৫ Time View

টানা খারাপ আবহাওয়ার কারণে বিশ্বের শীর্ষ নারকেল উৎপাদনকারী দেশগুলোতে উৎপাদন কমেছে। এর ফলে অনেক দেশে নারকেল এখন দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে এবং অনেক দেশে দাম দ্বিগুণ। ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলো অভ্যন্তরীণ বাজার রক্ষা করতে রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপের কথা ভাবছে। খবর গালফ নিউজ

মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে বসবাসকারী মোহামাদ ফাহমি ফাত বলেন, এবারের ঈদে তারা অর্ধেক খাবার রান্না করেছেন, কারণ নারকেল দুধ কম পাওয়া গেছে। আগে যেখানে ছয় প্যাকেট কিনতেন, এবার কিনতে পেরেছেন মাত্র তিন প্যাকেট। তিনি বলেন, ‘নারকেল দুধ আমাদের খাবারের প্রাণ। এটা ছাড়া রান্নার স্বাদই নষ্ট হয়ে যায়।’

ফিলিপাইন বিশ্বের বৃহত্তম নারকেল উৎপাদক দেশ, চলতি বছরে উৎপাদন ২০ শতাংশ হ্রাসের পূর্বাভাস দিয়েছে। গত দুই বছর ধরে খরা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো চরম আবহাওয়া গাছের ফলন কমিয়ে দিয়েছে এবং কৃষকদের কাজ ব্যাহত করেছে বলে জানিয়েছে শীর্ষ রপ্তানিকারক সংস্থা এক্সেলাম রিসোর্সেস কর্পোরেশন।

ফিলিপাইন কোকোনাট অথরিটি জানিয়েছে, তারা দেশের চাহিদা পূরণের জন্য রপ্তানির আগে নারকেল তেল সংরক্ষণের পরিকল্পনা করছে। একইভাবে ইন্দোনেশিয়া রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা ও শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দিয়েছে, যেখানে সাম্প্রতিক তিন মাসে নারকেলের দাম ১৫০ শতাংশ বেড়েছে।

শ্রীলঙ্কাতেও গত এক বছরে নারকেলের পাইকারি দাম দ্বিগুণ হয়েছে। সরকার ফেব্রুয়ারিতে বাজারে চাপ কমাতে নারকেল আমদানির অনুমতি দেয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারকেলের চাহিদা বৈশ্বিকভাবে আরও বাড়ছে, কারণ এটি ল্যাকটোজ-মুক্ত ও উদ্ভিজ্জ ভিত্তিক খাদ্যপণ্য হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক নারকেল কমিউনিটির তথ্য মতে, এ বছর বিশ্বে নারকেল তেল ব্যবহারের পরিমাণ ৩.২৩ মিলিয়ন টনে পৌঁছাবে।

এদিকে, মার্কিন কৃষি দপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, ২০২৪-২৫ মৌসুম শেষে বিশ্বে নারকেল তেলের মজুত গত চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছাবে। এরইমধ্যে বিশ্ববাজারে নারকেল তেলের দাম তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ, প্রতি টন ২ হাজার ৬৫৮ ডলারে লেনদেন হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণেই এই সংকট। খরা, ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ নারকেল গাছের ক্ষতি করেছে। ফলে ফলন কমে গেছে, ফসল তুলতে দেরি হচ্ছে। নারকেলের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের মধ্যে নারকেল দুধ ও নারকেল তেল বেশ জনপ্রিয়। এর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বাড়ছে।

মালয়েশিয়ায় অনেক দোকানদার নারকেলের অভাবে দোকান বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। বিকল্প হিসেবে ক্রিম বা দই ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হলেও অনেকে বলছেন, নারকেল দুধ ছাড়া রান্নার স্বাদ ঠিক থাকে না।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, সংকট মোকাবেলায় বিকল্প উপাদান ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হলেও প্রিয় খাবারের আসল স্বাদ বজায় রাখা কঠিন হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Farhan Shekh

জনপ্রিয়

গাইবান্ধার চাঞ্চল্যকর পত্রিকা বিক্রেতা ও ইজিবাইক চালক আনিছুর রহমান ঠান্ডার হত্যাকারী গ্রেফতার

বিশ্বজুড়ে নারকেলের সংকট, দাম দ্বিগুণ

Update Time : ০৫:৫১:৪৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

টানা খারাপ আবহাওয়ার কারণে বিশ্বের শীর্ষ নারকেল উৎপাদনকারী দেশগুলোতে উৎপাদন কমেছে। এর ফলে অনেক দেশে নারকেল এখন দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে এবং অনেক দেশে দাম দ্বিগুণ। ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলো অভ্যন্তরীণ বাজার রক্ষা করতে রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপের কথা ভাবছে। খবর গালফ নিউজ

মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে বসবাসকারী মোহামাদ ফাহমি ফাত বলেন, এবারের ঈদে তারা অর্ধেক খাবার রান্না করেছেন, কারণ নারকেল দুধ কম পাওয়া গেছে। আগে যেখানে ছয় প্যাকেট কিনতেন, এবার কিনতে পেরেছেন মাত্র তিন প্যাকেট। তিনি বলেন, ‘নারকেল দুধ আমাদের খাবারের প্রাণ। এটা ছাড়া রান্নার স্বাদই নষ্ট হয়ে যায়।’

ফিলিপাইন বিশ্বের বৃহত্তম নারকেল উৎপাদক দেশ, চলতি বছরে উৎপাদন ২০ শতাংশ হ্রাসের পূর্বাভাস দিয়েছে। গত দুই বছর ধরে খরা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো চরম আবহাওয়া গাছের ফলন কমিয়ে দিয়েছে এবং কৃষকদের কাজ ব্যাহত করেছে বলে জানিয়েছে শীর্ষ রপ্তানিকারক সংস্থা এক্সেলাম রিসোর্সেস কর্পোরেশন।

ফিলিপাইন কোকোনাট অথরিটি জানিয়েছে, তারা দেশের চাহিদা পূরণের জন্য রপ্তানির আগে নারকেল তেল সংরক্ষণের পরিকল্পনা করছে। একইভাবে ইন্দোনেশিয়া রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা ও শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দিয়েছে, যেখানে সাম্প্রতিক তিন মাসে নারকেলের দাম ১৫০ শতাংশ বেড়েছে।

শ্রীলঙ্কাতেও গত এক বছরে নারকেলের পাইকারি দাম দ্বিগুণ হয়েছে। সরকার ফেব্রুয়ারিতে বাজারে চাপ কমাতে নারকেল আমদানির অনুমতি দেয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারকেলের চাহিদা বৈশ্বিকভাবে আরও বাড়ছে, কারণ এটি ল্যাকটোজ-মুক্ত ও উদ্ভিজ্জ ভিত্তিক খাদ্যপণ্য হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক নারকেল কমিউনিটির তথ্য মতে, এ বছর বিশ্বে নারকেল তেল ব্যবহারের পরিমাণ ৩.২৩ মিলিয়ন টনে পৌঁছাবে।

এদিকে, মার্কিন কৃষি দপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, ২০২৪-২৫ মৌসুম শেষে বিশ্বে নারকেল তেলের মজুত গত চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছাবে। এরইমধ্যে বিশ্ববাজারে নারকেল তেলের দাম তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ, প্রতি টন ২ হাজার ৬৫৮ ডলারে লেনদেন হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণেই এই সংকট। খরা, ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ নারকেল গাছের ক্ষতি করেছে। ফলে ফলন কমে গেছে, ফসল তুলতে দেরি হচ্ছে। নারকেলের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের মধ্যে নারকেল দুধ ও নারকেল তেল বেশ জনপ্রিয়। এর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বাড়ছে।

মালয়েশিয়ায় অনেক দোকানদার নারকেলের অভাবে দোকান বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। বিকল্প হিসেবে ক্রিম বা দই ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হলেও অনেকে বলছেন, নারকেল দুধ ছাড়া রান্নার স্বাদ ঠিক থাকে না।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, সংকট মোকাবেলায় বিকল্প উপাদান ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হলেও প্রিয় খাবারের আসল স্বাদ বজায় রাখা কঠিন হবে।