প্রিন্ট এর তারিখঃ মে ৯, ২০২৫, ৬:২৭ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ মে ৮, ২০২৫, ২:১১ পি.এম
‘বিডিআর হত্যাকাণ্ড তাপসের নেতৃত্বে, জড়িত সাহারা-নানক-আজম-গিনি’
রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর হত্যাকাণ্ড হয়েছে সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপসের নেতৃত্বে। এছাড়াও এই ঘটনায় জড়িত ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজম ও মাহবুব আরা গিনি। সাবেক সেনাকর্মকর্তা মেজর (অব.) জাহিদি আহসান হাবিব এই সাক্ষ্য দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বোরহান উদ্দিন।
বিডিআর হত্যাকাণ্ডের মামলায় বৃহস্পতিবার (৮ মে) সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে এসব কথা জানান তিনি।ওই সাক্ষীর বরাত দিয়ে আইনজীবী বোরহান উদ্দিন জানান, ঘটনার দিন সকালে দরবার হলের দক্ষিণ দিক থেকে সিপাহি মইন ও কাজল অস্ত্র হাতে স্টেজে প্রবেশ করে। মইন গুলি করতে চায়। বিগ্রে. বারি তাকে ধরে ফেলে। কাজল দরবার হল থেকে বের হয়ে ফাঁকা গুলি করে। দরবার হলের ভেতরের সৈনিকরা জাগো বলে হুংকার দিয়ে বাইরে চলে যায়। বাইরে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণ হতে থাকে। ভেতরে কয়েকজন জওয়ান আর অফিসার ছাড়া কেউ ছিল না। গ্রেনেড বিস্ফোরণের শব্দ বাড়তে থাকে। ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে অফিসাররা সাহায্যের জন্য মোবাইলে যোগাযোগ করতে থাকে।
আইনজীবী বোরহান উদ্দিন জানান, নিজের সাক্ষ্যতে মেজর (অব.) জাহিদি আহসান হাবিব বলেন, ‘মেজর জেনারেল তারেক আহমেদ সিদ্দিকিকে বার্তা দিয়ে সাহায্য প্রার্থনা করি। শাকিল আহমেদকে বলি তারেকের সাথে কথা বলেন, ঐ প্রান্ত থেকে ফোন কেটে দেয়া হয়। এরমধ্যে সৈনিকেরা আমাদের ঘিরে ফেলে। গুলি বিস্ফোরণ বেড়ে যায়। পিছু হটে আমরা স্টেজের পেছনে আশ্রয় নেই। উত্তর দিকে ডিজিসহ সিনিয়ররা ও দক্ষিণ দিকে আমরা অবস্থান নেই। ডিজি দরবার হলের মাইক থেকে মেজর নুরুল ইসলামকে নির্দেশ দেন সকলকে শান্ত করতে আহবান জানানোর। আমি হাসিনার হাউসগার্ড অব মেজর মইনকে ফোন করি। তিনি জানান আমি হাসিনার কাছে আছি ফোনটা শাকিলকে দাও। আমি সাথে সাথে ফোন নিয়ে গিয়ে দেখি শাকিল হাসিনার সাথে কথা বলছে। আমি পাশ থেকে শুনছি শাকিল স্যার বলছে কিছু সৈনিক সন্ত্রাসী কাজ করে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে। আপনার সাহায্য প্রয়োজন। আমি ঘাসুনিয়া যুদ্ধের বর্ণনা দিয়ে সৈনিকদের শান্ত করার চেষ্টা করি। এরপর মেজর সালেহ ও কর্নেল ইমদাদ অনুরোধ করেন শান্ত হতে। কিন্তু তারা বিরত হচ্ছিল না।’
অবসরপ্রাপ্ত এই সেনা কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘১০-১২ জন গুলি করতে করতে দরবার হলে প্রবেশ করে। আমরা পর্দার আড়ালে ছিলাম, পর্দা সরিয়ে বের হয়ে পরিচয় দিয়ে শান্ত হতে বলি। বলি তোরা অস্ত্র ফেল, কথা বল৷ আমি তোদের ঘাসুনিয়া যুদ্ধ থেকে রক্ষা করেছি। পিলার ছিলো স্টিল দিয়ে মোড়ানো, সেখানে গুলির স্পিলটান লেগে আমার পেছনে লাগে, আমি পড়ে যাই। ২ জন সৈনিক আমাকে ধরে বলে আমি লাট্টু খানের ব্যাচমেট আমি আপনাকে চিনি৷ এটা বলে চ্যাংদোলা করে দরবারের বাইরে নিয়ে যায়। দেখি সুবেদার মেজর নূর ইসলামকে নিয়ে আসছে। দেখি গাছের নিচে সৈনিকেরা এসএমজি ৭ পয়েন্ট ৬ এবং গ্রেনেড নিয়ে বসে আছে। আমাকে দেখে শকুনের মতো তেড়ে আসে এবং রড দিয়ে মারতে থাকে। সুবেদার নুরুল ইসলাম আমাকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে সামনে চলে আসে এবং বলে স্যারকে মারছিস কেন উনি ভালো মানুষ। এসময় একটি আঘাত তার লাগে পেট ফুটো হয়ে যায়। এরপর আমাকে রক্ষার জন্য টেনে হিঁচড়ে মাঠের মাঝখানে নিতে চায়। এরপর কোয়ার্টারের দোতলায় নিয়ে যায়। রুমে ঢুকে আমি দু’জনকে দেখতে পায়। গোফরান মল্লিক নামে একজনের বাসায় নিয়ে যায়। এরপর তাকে অস্ত্র হাতে দেখতে পাই। ’
নিজের দেওয়া সাক্ষ্যতে তিনি আরও বলেন, ‘বিকেলে দিকে জোয়ানরা শান্ত হয়ে আসে এবং আমাকে স্যার বলে সম্মোধন করে এবং সমিহ করতে শুরু করে। বলে আপনাদের প্রতিনিধি এবং আমাদের প্রতিনিধি রাইফেল স্কয়ারে যাবেন, মিটিং হবে। একটা মিটিং হয়েছিল ফজলে নূর তাপসের নেতৃত্বে বিডিআর নেতাদের সাথে। যেখানে মূল বিষয় ছিল আর্মিরা পিলখানা থেকে চলে যাবে এবং অনির্দিষ্ট কালের জন্য তাপস এমপি ছাড়াও বিডিআরের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করবেন। শুনেছি যে মিটিং হয়েছিল সেখানে সাহারা খাতুন, নানক, আজম মাহবুব আরা গিনি উপস্থিত ছিলেন।’
Copyright © 2025 Gaibandha Express. All rights reserved.