
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিচ্যুত ৯৮৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিতে পুনর্বহালের রায় দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বিভাগ বেঞ্চ আজ এই রায় দেন।
আদালতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার সালাউদ্দিন দোলন, আইনজীবী মো: আসাদুজ্জামান ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
আজকের রায়ের পর আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন সাংবাদিকদের বলেন, ৯৮৮ জনের চাকরিচ্যুতি একটি বড় ঘটনা। যেটা সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে হয়েছিল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজে রিভিউ করে। সে রিভিউ নিষ্পত্তি ও আপিল মঞ্জুর করে আজ রায় দেন সর্বোচ্চ আদালত। আজকের রায়ের ফলে চাকরিচ্যুতদের চাকরিতে বহাল হতে আর বাধা নেই।
আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন সাংবাদিকদের আরও বলেন, আজকের এই রায় পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের কাছে পাঠাবো। সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত নেবে কত তারিখ থেকে তাদের পুনর্বহাল করবে। চাকরিচ্যুতি থেকে পুনর্বহাল পর্যন্ত সময়টাকে “অসাধারণ ছুটি” হিসেবে গণ্য করেছেন আদালত। তাদের জ্যেষ্ঠতা কোনোভাবে অ্যাফেক্টেড হবে না। সিনিয়রিটির ধারাবাহিকতা থাকবে। আর তাদের মধ্যে অনেকে মারা গেছে। এখন সবার বেনিফিটের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সিদ্ধান্ত নেবেন। এখন যারা জীবিত আছেন তাদের মধ্যে যারা ফিরতে চান তাদের চাকরিতে ফিরতে বাধা নেই।
আইনজীবীরা জানান, ২০০৩ সালের ১৭ নভেম্বর থেকে ২০০৪ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব নিয়োগ বাতিলের জন্য সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া ২০০৪ সালে হাইকোর্টে একটি রিট করেন। ২০০৬ সালের ২২ আগস্ট সে রিটের রুল খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। নির্ধারিত সময়ে এর বিরুদ্ধে কোনো আপিল বা রিভিউ করা হয়নি। ২০১০ সালে মামলার পক্ষ না হয়েও রিভিউ করেন তৎকালীন আওয়ামীলীগের সংসদ সদস্য আ ক ম মোজাম্মেল হক। ২০১১ সালের ২৩ আগস্ট ২০০৩ সালের ১৭ নভেম্বর থেকে ২০০৪ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব নিয়োগ বাতিলের জন্য রায় দেন বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী (মানিক) ও বিচারপতি গোন্দি চন্দ্র ঠাকুরের হাইকোর্ট বেঞ্চ। ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ১ ডিসেম্বর লিভ টু আপিল করা হয়। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিল করে ২০০৪ সালে ফজলে রাব্বী মিয়ার রিটে জারি করা রুল পুনরায় নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। এরপর পুনরায় রুল শুনানি শেষে ২০১২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট নয়টি নির্দেশনা দিয়ে রুল যথাযথ ঘোষণা করেন। ওই নির্দেশনার আলোকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৯৮৮ জনের চাকরি অবসান করে। ২০১২ সালে ওই রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে সংক্ষুব্ধরা। ২০১৬ সালে আপিল বিভাগ লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করেন। তবে ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রিভিউ আবেদন করার সিদ্ধান্ত নেন। সেই রিভিউয়ের শুনানি শেষে আজ রায় ঘোষণা করেন সর্বোচ্চ আদালত।