
দক্ষিণ আমেরিকার পেরুতে এক ঐতিহাসিক রায়ের মধ্য দিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের লড়াই এক গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছেছে। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ওলান্টা হুমালা এবং তার স্ত্রী, সাবেক ফার্স্ট লেডি নাদিন হেরেদিয়াকে অর্থ পাচার মামলায় ১৫ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছে পেরুর একটি আদালত। বহুদিন ধরে চলা এই মামলা দেশটির রাজনৈতিক ও বিচার ব্যবস্থায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এই তথ্য নিশ্চিত করে।
এই মামলার শুরু ২০১৬ সালে হুমালার প্রেসিডেন্ট মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, ২০০৬ ও ২০১১ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় ব্রাজিলের কুখ্যাত নির্মাণ কোম্পানি ওডেব্রেখ্ট থেকে অবৈধ অর্থ নিয়েছিলেন তিনি। তার স্ত্রী হেরেদিয়াও এই প্রচারণার অন্যতম সংগঠক এবং হুমালার ন্যাশনালিস্ট পার্টির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। এই অর্থ নেওয়ার অভিযোগেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। বিচারকার্য চলে প্রায় তিন বছর ধরে। রাষ্ট্রপক্ষ চেয়েছিল হুমালার ২০ বছর এবং হেরেদিয়ার ২৬.৫ বছরের সাজা। তবে আদালত দুজনকেই ১৫ বছর করে কারাদণ্ড প্রদান করে।
রায়ের সময় ৬২ বছর বয়সী হুমালা লিমার আদালতে সরাসরি উপস্থিত ছিলেন এবং তার স্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শুনানিতে অংশ নেন। শুরু থেকেই দুজনই নিজেদের নির্দোষ দাবি করে আসছেন। তবে আদালতের ভাষ্য অনুযায়ী, তাদের বিরুদ্ধে উপস্থাপিত প্রমাণ, বিশেষ করে ওডেব্রেখ্টের ঘুষ দেওয়ার স্বীকারোক্তি, তাদের দোষ প্রমাণে যথেষ্ট ছিল। উল্লেখযোগ্যভাবে, ওডেব্রেখ্ট ইতোমধ্যে স্বীকার করেছে যে তারা লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে সরকারি চুক্তি পেতে কয়েকশ কোটি ডলার ঘুষ দিয়েছে।
হুমালার রাজনৈতিক জীবনও নাটকীয় ও ঘটনাবহুল। সেনাবাহিনী থেকে রাজনীতিতে আসা হুমালা ২০০০ সালে ‘শাইনিং পাথ’ মাওবাদী বিদ্রোহীদের দমনে সক্রিয় ছিলেন। একই বছর তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফুজিমোরির সরকারের বিরুদ্ধে ব্যর্থ এক সামরিক বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন, যেটি তাকে জাতীয় পর্যায়ে পরিচিতি এনে দেয়। ২০০৬ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং হুগো শ্যাভেজের মতো সমাজতান্ত্রিক আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন বলে সমালোচিত হন। পরে ২০১১ সালের নির্বাচনে মধ্যপন্থা গ্রহণ করে ব্রাজিলের লুলা দা সিলভার উন্নয়নমূলক মডেলের প্রতিশ্রুতি দেন এবং সফলভাবে নির্বাচিত হন।
এই মামলার রায় শুধু হুমালা দম্পতির জন্য নয়, গোটা লাতিন আমেরিকার জন্য একটি বার্তা—যে দুর্নীতি যত উপরে উঠুক না কেন, একদিন তার বিচার হবেই। এই কারাদণ্ড পেরুর জনগণের মাঝে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আশা জাগিয়ে তুলেছে। রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে এমন রায় গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর আস্থা পুনর্গঠনে সহায়ক হতে পারে। তথ্যসূত্র : বিবিসি