সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এএসপি-ওসির বিরুদ্ধে মামলা, জুডিসিয়াল তদন্তের নির্দেশ

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৫:৩৫:৫৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫
  • ৬২ Time View

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও বর্তমান এএসপি মো. মিজানুর রহমান এবং একই থানার সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মাজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে করা মামলা জুডিসিয়াল তদন্তের আদেশ দিয়েছেন বিচারক।

রোববার (২৭ এপ্রিল) বিকেলে ময়মনসিংহ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৪ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক এ.কে.এম ছিফাতুল্লাহ্ এ আদেশ দেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেন একই আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. আজহারুল ইসলাম।

তিনি বলেন, জুডিসিয়াল তদন্তের আদেশ দিয়েছেন বিচারক। মামলার তদন্ত করবেন ময়মনসিংহ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৭ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক মো. ইকবাল হোসাইন। কতদিন তদন্ত হবে তা বিচারকের ওপর নির্ভর করবে।

এর আগে ১৭ এপ্রিল ঈশ্বরগঞ্জ থানার সাবেক ওসি মো. মিজানুর রহমান ও একই থানার সাবেক এসআই মো. মাজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার আবেদন করেন গিয়াস উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি।

ওইদিনই বিচারক এ.কে.এম ছিফাতুল্লাহ আবেদনটি আমলে নেওয়ায় রেজিস্ট্রার খাতায় মামলা (২৭৭/২৫) হিসেবে নথিবদ্ধ করা হয়।

এদিকে মো. মিজানুর রহমান পদোন্নতি পেয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হয়েছেন। তিনি বর্তমানে ঢাকায় কর্মরত। আর মো. মাজহারুল ইসলাম পদোন্নতি পেয়ে পরিদর্শক হয়েছেন। তিনি কোথায় কর্মরত তা জানা যায়নি।

মামলার বাদী গিয়াস উদ্দিন ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মরিচারচর গ্রামের মৃত শাহেদ আলীর ছেলে।

বাদীর ভাতিজা ও নিহত শফিকুল ইসলামের ছেলে সুমন আহমেদ বলেন, আমার বাবাকে কয়েকজন মিলে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। এরমধ্যে এক নম্বর আসামি ছিলেন নজরুল ইসলাম। তার নাম কেটে দিয়ে অন্যজনের নাম লেখা হয়। তাই আমরা মামলার খোঁজ নেইনি। এরই মধ্যে চার্জশিট হয়ে গেছে। ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা আদালতের নির্দেশ অমান্য করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নজরুল ইসলামের নাম সরিয়ে ছিলেন। তদন্তেই তা প্রমাণিত হবে।

মামলার আইনজীবী শাহজাহান কবির সাজু বলেন, গিয়াস উদ্দিন আদালতে যে মামলাটি করেছিলেন, সেটিতে লেখা ১ নম্বর আসামির নাম কেটে দেন সাবেক ওসি ও এসআই। তারা আদালতের নির্দেশ অমান্য করেছেন। বাদী ন্যায়বিচার পাবে বলে প্রত্যাশা করছি।

মামলা ও বাদী সূত্রে জানা যায়, গিয়াস উদ্দিনের পরিবারের সঙ্গে প্রতিবেশী নজরুল ইসলামের পরিবারের বিরোধ ছিল। ২০১০ সালের ২৭ নভেম্বর দুই পক্ষের কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মারামারির ঘটনা ঘটে। এসময় প্রতিপক্ষের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে শফিকুল ইসলামের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে।

পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরলে কিছুদিন পর আবারও অসুস্থ হয়ে যান।

এরপর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে ১০ দিন চিকিৎসা শেষে আবারও বাসায় নিয়ে আসা হয়। বাসায় কয়েক বছর স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা চলছিল। ২০১৫ সালে গুরুতর অসুস্থ হলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কয়েকদিন চিকিৎসা শেষে বসায় নিয়ে আসার পরদিন (একই বছরের ২ জানুয়ারি) মারা যান শফিকুল ইসলাম।

এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই গিয়াস উদ্দিন থানায় মামলা করতে গেলে ওসি মো. মিজানুর রহমান মামলা নেননি।

এরপর ২০১০ সালের ৭ ডিসেম্বর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগ করা হয়। ওইদিনই অভিযোগটি থানায় এজাহার হিসেবে নথিবদ্ধ করতে পুলিশকে নির্দেশ দেন বিচারক।

ওসি মো. মিজানুর রহমান এজাহার হিসেবে নথিবদ্ধ না করে এসআই মো. মাজরুল ইসলামের মাধ্যমে বাদী গিয়াস উদ্দিনকে বলেন, মামলাটি থানায় এসেছে, আপনার (বাদীর) টিপসই লাগবে। বাদী সরল মনে ওসি ও এসআইয়ের কথা বিশ্বাস করে টিপসই দেন।

পরবর্তীতে আদালত থেকে বাদী মামলার কপি তুলে দেখেন, অন্য একটি মামলা লিখে বাদীর সই নেওয়া যে মামলাটি এজাহার হিসেবে নথিবদ্ধ করেন, তাতে বাদীর নালিশি মামলার ১ নম্বর আসামি নজরুল ইসলামের নাম বাদ দিয়ে বাদীর ভাতিজা মো. আবদুর রশিদের নাম লিখে রাখা হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Farhan Shekh

জনপ্রিয়

সুন্দরগঞ্জের সীচাবাজারে হিন্দু থেকে মুসলিম হবার আশ্বাস সহ বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে জোরপুর্বক ধর্ষন অবশেষে প্রেমিক কারাগারে

এএসপি-ওসির বিরুদ্ধে মামলা, জুডিসিয়াল তদন্তের নির্দেশ

Update Time : ০৫:৩৫:৫৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও বর্তমান এএসপি মো. মিজানুর রহমান এবং একই থানার সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মাজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে করা মামলা জুডিসিয়াল তদন্তের আদেশ দিয়েছেন বিচারক।

রোববার (২৭ এপ্রিল) বিকেলে ময়মনসিংহ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৪ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক এ.কে.এম ছিফাতুল্লাহ্ এ আদেশ দেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেন একই আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. আজহারুল ইসলাম।

তিনি বলেন, জুডিসিয়াল তদন্তের আদেশ দিয়েছেন বিচারক। মামলার তদন্ত করবেন ময়মনসিংহ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৭ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক মো. ইকবাল হোসাইন। কতদিন তদন্ত হবে তা বিচারকের ওপর নির্ভর করবে।

এর আগে ১৭ এপ্রিল ঈশ্বরগঞ্জ থানার সাবেক ওসি মো. মিজানুর রহমান ও একই থানার সাবেক এসআই মো. মাজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার আবেদন করেন গিয়াস উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি।

ওইদিনই বিচারক এ.কে.এম ছিফাতুল্লাহ আবেদনটি আমলে নেওয়ায় রেজিস্ট্রার খাতায় মামলা (২৭৭/২৫) হিসেবে নথিবদ্ধ করা হয়।

এদিকে মো. মিজানুর রহমান পদোন্নতি পেয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হয়েছেন। তিনি বর্তমানে ঢাকায় কর্মরত। আর মো. মাজহারুল ইসলাম পদোন্নতি পেয়ে পরিদর্শক হয়েছেন। তিনি কোথায় কর্মরত তা জানা যায়নি।

মামলার বাদী গিয়াস উদ্দিন ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মরিচারচর গ্রামের মৃত শাহেদ আলীর ছেলে।

বাদীর ভাতিজা ও নিহত শফিকুল ইসলামের ছেলে সুমন আহমেদ বলেন, আমার বাবাকে কয়েকজন মিলে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। এরমধ্যে এক নম্বর আসামি ছিলেন নজরুল ইসলাম। তার নাম কেটে দিয়ে অন্যজনের নাম লেখা হয়। তাই আমরা মামলার খোঁজ নেইনি। এরই মধ্যে চার্জশিট হয়ে গেছে। ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা আদালতের নির্দেশ অমান্য করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নজরুল ইসলামের নাম সরিয়ে ছিলেন। তদন্তেই তা প্রমাণিত হবে।

মামলার আইনজীবী শাহজাহান কবির সাজু বলেন, গিয়াস উদ্দিন আদালতে যে মামলাটি করেছিলেন, সেটিতে লেখা ১ নম্বর আসামির নাম কেটে দেন সাবেক ওসি ও এসআই। তারা আদালতের নির্দেশ অমান্য করেছেন। বাদী ন্যায়বিচার পাবে বলে প্রত্যাশা করছি।

মামলা ও বাদী সূত্রে জানা যায়, গিয়াস উদ্দিনের পরিবারের সঙ্গে প্রতিবেশী নজরুল ইসলামের পরিবারের বিরোধ ছিল। ২০১০ সালের ২৭ নভেম্বর দুই পক্ষের কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মারামারির ঘটনা ঘটে। এসময় প্রতিপক্ষের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে শফিকুল ইসলামের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে।

পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরলে কিছুদিন পর আবারও অসুস্থ হয়ে যান।

এরপর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে ১০ দিন চিকিৎসা শেষে আবারও বাসায় নিয়ে আসা হয়। বাসায় কয়েক বছর স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা চলছিল। ২০১৫ সালে গুরুতর অসুস্থ হলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কয়েকদিন চিকিৎসা শেষে বসায় নিয়ে আসার পরদিন (একই বছরের ২ জানুয়ারি) মারা যান শফিকুল ইসলাম।

এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই গিয়াস উদ্দিন থানায় মামলা করতে গেলে ওসি মো. মিজানুর রহমান মামলা নেননি।

এরপর ২০১০ সালের ৭ ডিসেম্বর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগ করা হয়। ওইদিনই অভিযোগটি থানায় এজাহার হিসেবে নথিবদ্ধ করতে পুলিশকে নির্দেশ দেন বিচারক।

ওসি মো. মিজানুর রহমান এজাহার হিসেবে নথিবদ্ধ না করে এসআই মো. মাজরুল ইসলামের মাধ্যমে বাদী গিয়াস উদ্দিনকে বলেন, মামলাটি থানায় এসেছে, আপনার (বাদীর) টিপসই লাগবে। বাদী সরল মনে ওসি ও এসআইয়ের কথা বিশ্বাস করে টিপসই দেন।

পরবর্তীতে আদালত থেকে বাদী মামলার কপি তুলে দেখেন, অন্য একটি মামলা লিখে বাদীর সই নেওয়া যে মামলাটি এজাহার হিসেবে নথিবদ্ধ করেন, তাতে বাদীর নালিশি মামলার ১ নম্বর আসামি নজরুল ইসলামের নাম বাদ দিয়ে বাদীর ভাতিজা মো. আবদুর রশিদের নাম লিখে রাখা হয়েছে।