ঢাকা থেকে রাজধানী সরানোর সুপারিশ

  • Reporter Name
  • Update Time : 05:48:29 am, Wednesday, 5 February 2025
  • 17 Time View

চারশ বছরের পুরনো নগর ঢাকা বাংলার রাজধানী হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু বেশ আগে প্রায় ২ কোটি মানুষের চাপে ভারাক্রান্ত এই মেট্রোপলিটন তার বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। বৈশ্বিক বাসযোগ্যতা, বায়ু দূষণও যানবাহনের গতি সূচকে একদম তলানিতে অবস্থান করছে ঢাকা। তাই ঢাকা থেকে রাজধানী সরানোর সুপারিশ করেছে অর্থনৈতিক কৌশল পুননির্ধারণ টাস্ক ফোর্স। সেই সাথে সহজ শর্তে গাড়ি কেনার সুবিধাও কঠিন করার সুপারিশ দুরূহ করবে মধ্যবিত্তের গাড়ি কেনার স্বপ্ন।

বৈষম্যহীন টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক কৌশল পুননির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সম্পদ আহরণে গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর টাস্ক ফোর্স গঠন করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। গত ৩০ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনুসের কাছে টাস্ক ফোর্সের প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন, পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। সেই প্রতিবেদনে নানাবিধ সুপারিশের পাশাপাশি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ হচ্ছে রাজধানী ঢাকার স্থানান্তর।

বৈশ্বিক বাসযোগ্যতা সূচক, বায়ুদূষণ সূচক, যানবাহনের গতি সূচকসহ আটটি বৈশ্বিক গবেষণা ও সমীক্ষার উদাহরণ টেনে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সবকটিতেই ঢাকার অবস্থান সবার নিচে কিংবা নিচের দিকে। এই পরিস্থিতিতে দীর্ঘ মেয়াদে ঢাকা থেকে রাজধানী স্থানান্তরের পরামর্শ দিচ্ছে টাস্কফোর্স কমিটি।

ঢাকার ৮৫% অবকাঠামো অঅনুমোদিত এবং তা অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার জন্য উপযোগী নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। একই সাথে একে উদ্বেগজনক হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। ১৯৯৭ সালে ঢাকায় যানবাহনের গড় গতিবেগ ছিল যেখানে ঘণ্টায় ২৫ কিলোমিটার, ২০১৫ সালে তা ছয় দশমিক সাত কিলোমিটার এসেছে যা এখন আরও কমেছে।

প্রতিবেদনে রাজধানী ঢাকাকে কেন্দ্র করে গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও ব্যক্তিগত গাড়ি কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে গুরুত্বসহকারে। নগরে একটি সমন্বিত গণপরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরামর্শ দেওয়া হয় টাস্কফোর্স কমিটির প্রতিবেদনটিতে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বাস রুট, ফ্রাঞ্চাইজি, ট্রাম বিআরটি, অ্যালার্টই বা লাইট রেল ট্রানজিট, মনোরেল, সাব আরবান কমিউটার রেল, মেট্রো রেল ও রাইড শেয়ারিং এর মতো সব ধরনের গণপরিবহন ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্তির।

প্রতিবেদনের একটি অংশে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার সুপারিশ করা হয়। এর জন্য রাজধানীতে কত গাড়ি চলতে পারবে সেই সংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। গ্যাস ও বিদ্যুৎ ব্যবহারের মতো সড়ক ব্যবহারে গাড়ির জন্য মাসুল ধার্য করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ঢাকায় উড়াল সড়ক নির্মাণ বন্ধের সুপারিশ জানিয়ে ট্রেনের মতো টেকসই গণপরিবহনের জন্য উড়াল রেলপথের কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনের সুপারিশে।

সড়ক ব্যবহারে গাড়ির জন্য মাসুল ধার্য করার পরামর্শের পাশাপাশি ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে গাড়ি কেনার ঋণ কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছে টাস্ক ফোর্স। এতে করে মধ্যবিত্তের গাড়ি কেনার স্বপ্ন পূরণ খানিকটা কঠিন হয়ে উঠতে পারে। গাড়ির অবৈধ পার্কিংয়ের জন্য জরিমানা বাড়ানো প্রকল্পের অধীনে যাতে বিলাসবহুল গাড়ি না কেনা হয়, ব্যাটারিচালিত রিকশা লেগুনার মতো যানবাহন চলাচল বন্ধের পরামর্শ দিয়ে বড় দ্বিতল বাস বাড়ানোর কথা বলছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Tavir Rahman

Popular Post

ঢাকা থেকে রাজধানী সরানোর সুপারিশ

Update Time : 05:48:29 am, Wednesday, 5 February 2025

চারশ বছরের পুরনো নগর ঢাকা বাংলার রাজধানী হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু বেশ আগে প্রায় ২ কোটি মানুষের চাপে ভারাক্রান্ত এই মেট্রোপলিটন তার বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। বৈশ্বিক বাসযোগ্যতা, বায়ু দূষণও যানবাহনের গতি সূচকে একদম তলানিতে অবস্থান করছে ঢাকা। তাই ঢাকা থেকে রাজধানী সরানোর সুপারিশ করেছে অর্থনৈতিক কৌশল পুননির্ধারণ টাস্ক ফোর্স। সেই সাথে সহজ শর্তে গাড়ি কেনার সুবিধাও কঠিন করার সুপারিশ দুরূহ করবে মধ্যবিত্তের গাড়ি কেনার স্বপ্ন।

বৈষম্যহীন টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক কৌশল পুননির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সম্পদ আহরণে গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর টাস্ক ফোর্স গঠন করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। গত ৩০ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনুসের কাছে টাস্ক ফোর্সের প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন, পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। সেই প্রতিবেদনে নানাবিধ সুপারিশের পাশাপাশি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ হচ্ছে রাজধানী ঢাকার স্থানান্তর।

বৈশ্বিক বাসযোগ্যতা সূচক, বায়ুদূষণ সূচক, যানবাহনের গতি সূচকসহ আটটি বৈশ্বিক গবেষণা ও সমীক্ষার উদাহরণ টেনে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সবকটিতেই ঢাকার অবস্থান সবার নিচে কিংবা নিচের দিকে। এই পরিস্থিতিতে দীর্ঘ মেয়াদে ঢাকা থেকে রাজধানী স্থানান্তরের পরামর্শ দিচ্ছে টাস্কফোর্স কমিটি।

ঢাকার ৮৫% অবকাঠামো অঅনুমোদিত এবং তা অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার জন্য উপযোগী নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। একই সাথে একে উদ্বেগজনক হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। ১৯৯৭ সালে ঢাকায় যানবাহনের গড় গতিবেগ ছিল যেখানে ঘণ্টায় ২৫ কিলোমিটার, ২০১৫ সালে তা ছয় দশমিক সাত কিলোমিটার এসেছে যা এখন আরও কমেছে।

প্রতিবেদনে রাজধানী ঢাকাকে কেন্দ্র করে গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও ব্যক্তিগত গাড়ি কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে গুরুত্বসহকারে। নগরে একটি সমন্বিত গণপরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরামর্শ দেওয়া হয় টাস্কফোর্স কমিটির প্রতিবেদনটিতে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বাস রুট, ফ্রাঞ্চাইজি, ট্রাম বিআরটি, অ্যালার্টই বা লাইট রেল ট্রানজিট, মনোরেল, সাব আরবান কমিউটার রেল, মেট্রো রেল ও রাইড শেয়ারিং এর মতো সব ধরনের গণপরিবহন ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্তির।

প্রতিবেদনের একটি অংশে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার সুপারিশ করা হয়। এর জন্য রাজধানীতে কত গাড়ি চলতে পারবে সেই সংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। গ্যাস ও বিদ্যুৎ ব্যবহারের মতো সড়ক ব্যবহারে গাড়ির জন্য মাসুল ধার্য করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ঢাকায় উড়াল সড়ক নির্মাণ বন্ধের সুপারিশ জানিয়ে ট্রেনের মতো টেকসই গণপরিবহনের জন্য উড়াল রেলপথের কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনের সুপারিশে।

সড়ক ব্যবহারে গাড়ির জন্য মাসুল ধার্য করার পরামর্শের পাশাপাশি ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে গাড়ি কেনার ঋণ কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছে টাস্ক ফোর্স। এতে করে মধ্যবিত্তের গাড়ি কেনার স্বপ্ন পূরণ খানিকটা কঠিন হয়ে উঠতে পারে। গাড়ির অবৈধ পার্কিংয়ের জন্য জরিমানা বাড়ানো প্রকল্পের অধীনে যাতে বিলাসবহুল গাড়ি না কেনা হয়, ব্যাটারিচালিত রিকশা লেগুনার মতো যানবাহন চলাচল বন্ধের পরামর্শ দিয়ে বড় দ্বিতল বাস বাড়ানোর কথা বলছে।