আজহারীর মাহফিলে খোয়া গেল অসংখ্য স্বর্ণালংকার-মোবাইল, থানায় জিডির হিড়িক

  • Reporter Name
  • Update Time : 01:24:01 pm, Saturday, 4 January 2025
  • 121 Time View

যশোরে ড. মিজানুর রহমান আজহারীর ওয়াজ মাহফিলে গিয়ে অসংখ্য মানুষের মোবাইল ফোন ও স্বর্ণালংকার খোয়া গেছে।শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) রাতে শহরতলী পুলেটহাটস্থ আদ-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বর ও আশপাশ এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে।

ঘটনার পর থেকে যশোর কোতয়ালী মডেল থানায় ভুক্তভোগীরা জিডি করতে রীতিমতো লাইন ধরেছেন। থানা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শনিবার বেলা তিনটা পর্যন্ত মাহফিলে মোবাইল ও স্বর্ণালংকার খোয়া যাওয়ার ঘটনায় ৩ শত জিডি হয়েছে। প্রতিনিয়ত যেভাবে জিডি করতে ভুক্তভোগীরা থানায় আসছেন তাতে এই সংখ্যা কয়েকগুণ বাড়বে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

যশোর শহরতলী পুলেরহাটস্থ আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশন আয়োজিত তিনদিন ব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের শেষদিন ছিল শুক্রবার। এ দিন রাতে বক্তব্য রাখেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী। তার আসার খবরে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের ঢল নামে সমগ্র মাহফিল এলাকায়। শুক্রবার সকালে থেকেই শীত উপেক্ষা করে মানুষ জমায়েত হয়। বিকেল থেকে মাহফিল স্থান ছাপিয়ে সড়ক, মহাসড়কেও শিশু, নারী, পুরুষের ঢল নামে। দুপুরের পর সড়কে যানজট দেখা দেয়। এজন্য অনেকেই পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছায়। সব সড়কের ঢেউ গিয়ে মিশে পুলেরহাটে। মাহফিল প্রাঙ্গণে পাঁচ থেকে সাত লাখ মানুষের সমাগম ঘটে।

Jashore pic-1

রাত সাড়ে ১০ টার পর মাহফিল শেষ হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে পদদলিত হয়ে একাধিক ব্যক্তি মারা যাওয়ার খবর। আহতের সংখ্যাও অর্ধশতাধিক। এছাড়া মোবাইল, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র খোয়া যাওয়ার খবর।

হাসপাতাল ও থানা সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেনারেল হাসপাতালে পদদলিত হয়ে ২১ জন ভর্তি হওয়ার খবর জানা গেছে। এর মধ্যে রাতেই ১০ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আর ১১ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়াতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

শুক্রবার গভীর রাত থেকে শনিবার বেলা তিনটা পর্যন্ত স্বর্ণালংকার ও মোবাইল খোয়া যাওয়ার ঘটনায় তিনশ’ জিডি হয়েছে বলে জানিয়েছেন যশোর কোতয়ালী মডেল থানার ডিউটি অফিসার শারমিন আক্তার।

তিনি বলেন, ‘শুক্রবার রাত থেকে অসংখ্য মানুষ মোবাইল হারিয়ে যাওয়া বা চুরির ঘটনায় জিডি করতে আসে। তাৎক্ষণিক যারা মোবাইলের ডকুমেন্ট দেখাতে পেরেছে তারা জিডি করতে পেরেছে। আর শনিবার সকাল থেকে রীতিমতো ভিড় লেগেছে। কয়েক হাজার জিডি হতে পারে বলে তিনি ধারণা করছেন।

মায়ের দেড় ভরি ওজনের একটি গলার হার খোয়া যাওয়ার পর শনিবার দুপুরে জিডি করতে এসেছেন সদরের রুপদিয়া থেকে ইব্রাহিম হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা মা মহিলা প্যান্ডেলে বসে আজহারী হুজুরের ওয়াজ শুনছিলেন। এক পর্যায়ে গলায় হাত দিয়ে দেখেন তার গলায় হার নেই। তাই থানায় জিডি করতে এসেছি।’

বউয়ের গলার চেইন হারিয়ে যাওয়ার পর থানায় জিডি করতে আসেন শহরতলী নওয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা হয়রত হোসেন। তিনি বলেন, ‘এভাবে ওয়াজ মাহফিলে চুরি হওয়ার ঘটনা দুঃখজনক এবং অপরাধমূলক কাজ। লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়েছে গতকাল। চোররাও এ ধরনের অনুষ্ঠানে সুযোগটা কাজে লাগায়। কর্তৃপক্ষের আরও সর্তক ও ব্যবস্থাপনা ভালো করা উচিত ছিল। আর আমাদেরও সচেতন হওয়া উচিত ছিল, ব্যাপক সমাগম স্থানে দামি দামি জিনিসপত্র পরিধান ও নিয়ে যাওয়া উচিত হয়নি।’

jd-1.width-750

শহরের বেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা এনামুল হক বলেন, ‘যশোরের ইতিহাসে এমন বড় মাহফিল হয়নি। ওয়াজ মাহফিলে গেছিলাম ইমান আমল ঠিক করতে। আর চোরেরা তাদের ব্যবসা খুঁজে নিলো। হাজার হাজার মানুষের মোবাইল হারিয়ে যাওয়ার খবর শুনেছি মাহফিলের মাঠেই। অনেকেই দূরদূরান্ত থেকে এসেছে, তাই জিডি করতে কাগজপত্র দেখাতে না পারায় জিডি করতে পারছে না। যারা চুরির মতো এ ধরনের কাজ করছে মাহফিলে; তারা মাহফিলের সৌন্দর্য নষ্ট করেছে। তাদের বিচার হওয়া উচিত।’

যশোর কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘তিনদিন ব্যাপী বৃহৎ মাহফিল হয়েছে যশোরে। পাঁচ থেকে সাত লক্ষ মানুষ সমাগম হয়েছে। এর ভিতরে অসংখ্য মানুষের মোবাইল, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র হারিয়ে যাওয়ার খবর পেয়েছি। অনেকেই জিডি করছেন। কয়েকটি চুরির অভিযোগও পেয়েছি। পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘মাহফিলে আহত বা মৃত্যু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। মাহফিলে পদদলিত হয়ে মারা যাওয়ার কোন ঘটনা ঘটেনি। ফলে মৃত্যু নিয়ে গুজব না ছড়ানোর অনুরোধ করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।’

প্রসঙ্গত, গত পহেলা জানুয়ারি বুধবার থেকে তিনদিন ব্যাপী এই মাহফিল শুরু হয়। মাহফিলের প্রথম দিন বুধবার আলোচনা করেন আল্লামা মামুনুল হক ও আব্দুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ। বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিন আলোচনা করেন মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানী ও মুফতি আমির হাজমা। শেষদিন শুক্রবার আলোচনা করেন শায়খ আহমাদুল্লাহ ও ড. মিজানুর রহমান আজহারী।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Tavir Rahman

Popular Post

আজহারীর মাহফিলে খোয়া গেল অসংখ্য স্বর্ণালংকার-মোবাইল, থানায় জিডির হিড়িক

Update Time : 01:24:01 pm, Saturday, 4 January 2025

যশোরে ড. মিজানুর রহমান আজহারীর ওয়াজ মাহফিলে গিয়ে অসংখ্য মানুষের মোবাইল ফোন ও স্বর্ণালংকার খোয়া গেছে।শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) রাতে শহরতলী পুলেটহাটস্থ আদ-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বর ও আশপাশ এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে।

ঘটনার পর থেকে যশোর কোতয়ালী মডেল থানায় ভুক্তভোগীরা জিডি করতে রীতিমতো লাইন ধরেছেন। থানা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শনিবার বেলা তিনটা পর্যন্ত মাহফিলে মোবাইল ও স্বর্ণালংকার খোয়া যাওয়ার ঘটনায় ৩ শত জিডি হয়েছে। প্রতিনিয়ত যেভাবে জিডি করতে ভুক্তভোগীরা থানায় আসছেন তাতে এই সংখ্যা কয়েকগুণ বাড়বে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

যশোর শহরতলী পুলেরহাটস্থ আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশন আয়োজিত তিনদিন ব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের শেষদিন ছিল শুক্রবার। এ দিন রাতে বক্তব্য রাখেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী। তার আসার খবরে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের ঢল নামে সমগ্র মাহফিল এলাকায়। শুক্রবার সকালে থেকেই শীত উপেক্ষা করে মানুষ জমায়েত হয়। বিকেল থেকে মাহফিল স্থান ছাপিয়ে সড়ক, মহাসড়কেও শিশু, নারী, পুরুষের ঢল নামে। দুপুরের পর সড়কে যানজট দেখা দেয়। এজন্য অনেকেই পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছায়। সব সড়কের ঢেউ গিয়ে মিশে পুলেরহাটে। মাহফিল প্রাঙ্গণে পাঁচ থেকে সাত লাখ মানুষের সমাগম ঘটে।

Jashore pic-1

রাত সাড়ে ১০ টার পর মাহফিল শেষ হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে পদদলিত হয়ে একাধিক ব্যক্তি মারা যাওয়ার খবর। আহতের সংখ্যাও অর্ধশতাধিক। এছাড়া মোবাইল, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র খোয়া যাওয়ার খবর।

হাসপাতাল ও থানা সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেনারেল হাসপাতালে পদদলিত হয়ে ২১ জন ভর্তি হওয়ার খবর জানা গেছে। এর মধ্যে রাতেই ১০ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আর ১১ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়াতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

শুক্রবার গভীর রাত থেকে শনিবার বেলা তিনটা পর্যন্ত স্বর্ণালংকার ও মোবাইল খোয়া যাওয়ার ঘটনায় তিনশ’ জিডি হয়েছে বলে জানিয়েছেন যশোর কোতয়ালী মডেল থানার ডিউটি অফিসার শারমিন আক্তার।

তিনি বলেন, ‘শুক্রবার রাত থেকে অসংখ্য মানুষ মোবাইল হারিয়ে যাওয়া বা চুরির ঘটনায় জিডি করতে আসে। তাৎক্ষণিক যারা মোবাইলের ডকুমেন্ট দেখাতে পেরেছে তারা জিডি করতে পেরেছে। আর শনিবার সকাল থেকে রীতিমতো ভিড় লেগেছে। কয়েক হাজার জিডি হতে পারে বলে তিনি ধারণা করছেন।

মায়ের দেড় ভরি ওজনের একটি গলার হার খোয়া যাওয়ার পর শনিবার দুপুরে জিডি করতে এসেছেন সদরের রুপদিয়া থেকে ইব্রাহিম হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা মা মহিলা প্যান্ডেলে বসে আজহারী হুজুরের ওয়াজ শুনছিলেন। এক পর্যায়ে গলায় হাত দিয়ে দেখেন তার গলায় হার নেই। তাই থানায় জিডি করতে এসেছি।’

বউয়ের গলার চেইন হারিয়ে যাওয়ার পর থানায় জিডি করতে আসেন শহরতলী নওয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা হয়রত হোসেন। তিনি বলেন, ‘এভাবে ওয়াজ মাহফিলে চুরি হওয়ার ঘটনা দুঃখজনক এবং অপরাধমূলক কাজ। লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়েছে গতকাল। চোররাও এ ধরনের অনুষ্ঠানে সুযোগটা কাজে লাগায়। কর্তৃপক্ষের আরও সর্তক ও ব্যবস্থাপনা ভালো করা উচিত ছিল। আর আমাদেরও সচেতন হওয়া উচিত ছিল, ব্যাপক সমাগম স্থানে দামি দামি জিনিসপত্র পরিধান ও নিয়ে যাওয়া উচিত হয়নি।’

jd-1.width-750

শহরের বেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা এনামুল হক বলেন, ‘যশোরের ইতিহাসে এমন বড় মাহফিল হয়নি। ওয়াজ মাহফিলে গেছিলাম ইমান আমল ঠিক করতে। আর চোরেরা তাদের ব্যবসা খুঁজে নিলো। হাজার হাজার মানুষের মোবাইল হারিয়ে যাওয়ার খবর শুনেছি মাহফিলের মাঠেই। অনেকেই দূরদূরান্ত থেকে এসেছে, তাই জিডি করতে কাগজপত্র দেখাতে না পারায় জিডি করতে পারছে না। যারা চুরির মতো এ ধরনের কাজ করছে মাহফিলে; তারা মাহফিলের সৌন্দর্য নষ্ট করেছে। তাদের বিচার হওয়া উচিত।’

যশোর কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘তিনদিন ব্যাপী বৃহৎ মাহফিল হয়েছে যশোরে। পাঁচ থেকে সাত লক্ষ মানুষ সমাগম হয়েছে। এর ভিতরে অসংখ্য মানুষের মোবাইল, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র হারিয়ে যাওয়ার খবর পেয়েছি। অনেকেই জিডি করছেন। কয়েকটি চুরির অভিযোগও পেয়েছি। পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘মাহফিলে আহত বা মৃত্যু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। মাহফিলে পদদলিত হয়ে মারা যাওয়ার কোন ঘটনা ঘটেনি। ফলে মৃত্যু নিয়ে গুজব না ছড়ানোর অনুরোধ করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।’

প্রসঙ্গত, গত পহেলা জানুয়ারি বুধবার থেকে তিনদিন ব্যাপী এই মাহফিল শুরু হয়। মাহফিলের প্রথম দিন বুধবার আলোচনা করেন আল্লামা মামুনুল হক ও আব্দুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ। বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিন আলোচনা করেন মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানী ও মুফতি আমির হাজমা। শেষদিন শুক্রবার আলোচনা করেন শায়খ আহমাদুল্লাহ ও ড. মিজানুর রহমান আজহারী।