গুরুতর অসুস্থ হয়ে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি গুণী অভিনেতা প্রবীর মিত্র। শরীরে অক্সিজেন স্বল্পতাসহ বেশ কিছু অসুস্থতায় গত ২২ ডিসেম্বর তাকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। অভিনেতার বর্তমান অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন প্রবীর মিত্রের ছেলে মিথুন মিত্র।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) দুপুরে ছেলে মিথুন মিত্র গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বাবার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। বয়সের সঙ্গে কিছু শারীরিক জটিলতায় গত ২২ ডিসেম্বর বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করি। শরীরে অক্সিজেন পাচ্ছিল না। এরপর আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখান থেকে কেবিনে দেওয়া হয়েছিল। এখন আবার এইচডিইউতে রাখা হয়েছে। তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। খারাপ অবস্থার দিকে। ব্লাড লস হচ্ছে, প্লাটিলেটও কমে যাচ্ছে।’
১৯৪৩ সালের ১৮ আগস্ট কুমিল্লার চান্দিনায় জন্মগ্রহণ করেন প্রবীর মিত্র। তার পুরো নাম প্রবীর কুমার মিত্র। পুরান ঢাকায় বড় হওয়া প্রবীর মিত্র স্কুলজীবন থেকেই নাট্যচর্চার সঙ্গে যুক্ত হন। স্কুলজীবনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অভিনয় করেছিলেন তিনি।
১৯৬৯ সালে প্রয়াত এইচ আকবরের ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রথম প্রবীর মিত্র ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। যদিও চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ১৯৭১ সালের ১ জানুয়ারি। ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে নায়ক চরিত্রে অভিনয় করেছেন এই অভিনেতা। ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘চাবুক’-এর মতো সিনেমায় তিনি ছিলেন নায়ক। এ ছাড়া ‘রঙিন নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ সিনেমাতেও তিনি ছিলেন মূখ্য চরিত্রে। এরপর ধীরে ধীরে প্রবীর মিত্র মনোযোগী হন চরিত্রভিত্তিক অভিনয়ে।
‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘জীবন তৃষ্ণা’, ‘সেয়ানা’, ‘জালিয়াত’, ‘ফরিয়াদ’, ‘রক্ত শপথ’, ‘চরিত্রহীন’, ‘জয় পরাজয়’, ‘অঙ্গার’, ‘মিন্টু আমার নাম’, ‘ফকির মজনু শাহ’, ‘মধুমিতা’, ‘অশান্ত ঢেউ’, ‘অলংকার’, ‘অনুরাগ’, ‘প্রতিজ্ঞা’, ‘তরুলতা’, ‘গাঁয়ের ছেলে’, ‘পুত্রবধূ’সহ চার শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।
নান্দনিক অভিনয়ের জন্য বরাবরই প্রশংসিত প্রবীর মিত্র। কিন্তু দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তার পুরস্কার ভাগ্য প্রসন্ন নয়। কেবল ‘বড় ভালো লোক ছিল’ সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব চরিত্রে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে তাকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়। শারীরিক অসুস্থতার জন্য বেশ কয়েক বছর ধরে অভিনয়ে অনিয়মিত তিনি। এসময় ঘর বন্দিই কাটছিল তার দিন-রাত।