সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আইনজীবীর অশোভন আচরণে বিচারকের এজলাস ত্যাগ

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৬:৪১:০৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫
  • ৭৮ Time View

আদালতে হত্যা মামলার আসামি এক আওয়ামী লীগ নেতার রিমাণ্ড শুনানিকালে বিচারকের সাথে আইনজীবী সুলভ আচরণ না করার অভিযোগে এজলাস ত্যাগ করেছেন সাতক্ষীরার আমলী-৩ নং আদালতের বিচারক মারুফা আক্তার। আজ মঙ্গলবার সকালে এজলাস ত্যাগের পর দিনভর ওই আদালতের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বিচারপ্রার্থীরা পড়েন দুর্ভোগে।

সাতক্ষীরা জজ কোর্টের কয়েকজন আইনজীবী জানান, গত বছরের ৫ আগষ্ট সরকার পতনের দিন আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকির হোসেনের গুলিতে হিজলিয়া গ্রামের রহিম আলী সরদারের ছেলে আলমসহ তিনজন মারা যান। গুলিতে আহত হন আরো সাতজন। এ ঘটনায় নিহত আলমের বাবা রহিম আলী বাদি হয়ে ওই বছরের ১৫ আগষ্ট জাকির হোসেনসহ অজ্ঞাতনামা ১৫ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় সন্ধিগ্ধ আসামী হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শ্রীউলা ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা শাকিলের মঙ্গলবার পৌনে ১১টায় আমলী আদালত-৩ এ রিমা- শুনানী শুরু হয়।

সাত দিনের রিমাণ্ড শুনানিতে অংশ নেন মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা আশাশুনি থানার পুলিশ পরিদর্শক আব্দুল ওয়াদুদ, আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিদর্শক বিশ্বনাথ রায়, রাষ্ট্রপক্ষের পিপি অ্যাড, আব্দুস সাত্তার, জেলা আইনজীবী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা জাতীয়তাবাদি আইনজীবী ফোরামের সদস্য অ্যাড. নুরুল আমিনসহ কমপক্ষে ২৫ জন আইনজীবী। আসামীপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. এম.শাহ আলমসহ কয়েকজন। উভয়পক্ষের শুনানী শেষে বিচারক মারুফা আক্তার আসামী আবু হেনা শাকিলকে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক দিনের রিমাণ্ড মঞ্জর করেন।

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের সঙ্গে শুনানিতে অংশ নেওয়া অ্যাড. নুরুল আমিন বিচারককে উদ্দেশ্য করে বলেন, তিনি ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার দোসর, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তার নিয়োগ, তিনি ওই চেয়ারে বসার যোগ্য নন। এ ধরণের একটি স্পর্শকাতর মামলায় কেন আবু হেনা শাকিলকে কারাফটকে রিমাণ্ড মঞ্জুর করলেন তা তাদের জানতে বাকী নেই। একপর্যায়ে বিচারক ১১টার দিকে এজলাস ছেড়ে নিজের খাস কামরায় চলে যান। বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত ওই বিচারক এজলাসে না ওঠায় বিচারপ্রার্থীদের বিচার কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় বাড়ি চলে যেতে হয়। এটা বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ ছাড়া কিছু নয়।

কলারোয়া উপজেলার বাটরা গ্রামের ওহিদুজ্জামান সুমন ও দাউদ হোসেন জানান, তারা কলারোয়া থানার একটি মারপিটের মামলায় এজাহারভুক্ত আসামী হিসেবে আইনজীবীর মাধ্যমে মঙ্গলবার আমলী-৩ নং আদালতে আত্মসমর্পণ করার আবেদন করেন। আশাশুনি থানার একটি হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা আবু হেনা শাকিলের রিমাণ্ড শুনানি নিয়ে বিচারক মারুফা আক্তার সকাল ১১টায় এজলাস ত্যাগ করায় তাদেরকে বাড়ি ফিরে আসতে হয়। আবারো তাদেরকে আগামিকাল বুধবার আদালতে হাজির হতে হবে। এটা তাদের দুর্ভোগ ছাড়া কিছু নয়।

আমলী-৩ আদালতের বেঞ্চ কর্মকর্তা ( পেশকার) মাহাদী হাসান জানান, মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে বিচারক এজলাস ত্যাগ করার পর তিনি নির্ধারিত সময় বিকেল সাড়ে তিনটার মধ্যে এজলাসে আসেননি। ফলে আশাশুনি ও কলারোয়া থানার যে সব আসামীর জামিন শুনানী, রিমাণ্ড শুনানিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম হয়নি তা আগামিকাল বুধবার শুনানী হবে।

এ ব্যাপারে অ্যাড. নুরুল আমিন বলেন, বিচারক একটি স্পর্শকাতর হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা আবু হেনা শাকিলের থানা হেফাজতে রিমাণ্ড মঞ্জুর না করে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেওয়াটা তারা মেনে নিতে পারেননি। সেকারণে তিনি ওই বিচারককে উদ্দেশ্য করে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের দোসর বলেছেন। তিনি ওই চেয়ারের জন্য যোগ্য নয় বলে মনে করেন। এ কারণে ওই আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকলে সেটা দুর্ভাগ্য ছাড়া কিছু নয়। তবে এ ঘটনায় তারা ওই বিচারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে বুধবার জেলা আইনজীবী সমিতির সামনের প্রতিবাদ কর্মসুচি পালন করবেন।

সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এম শাহ আলম বলেন, একজন আইনজীবীর আদালতে অশোভন আচরণ ও আইনজীবীসুলভ আচরণ না করায় বিচারক এজলাস ছেড়ে চলে যান।

সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. আব্দুস সাত্তার জানান, তিনি রাষ্ট্রপক্ষে দাঁড়িয়ে রিমাণ্ড শুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন। অ্যাড. নুরুল আমিন বিচারককে উদ্দেশ্য করে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরসহ কয়েকটি কথা বলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বিষয়টি নিয়ে ওই আদালতের কার্যক্রম বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে কিনা তা তিনি জানেন না।

সাতক্ষীরা বিচারিক আদালতের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন বিচারক মারুফা আক্তারের বরাত দিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আদালত থেকে বিচারক নেমে যাওয়ার পর শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি আর এজলাসে উঠতে পারেননি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Tavir Rahman

জনপ্রিয়

আইনজীবীর অশোভন আচরণে বিচারকের এজলাস ত্যাগ

Update Time : ০৬:৪১:০৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫

আদালতে হত্যা মামলার আসামি এক আওয়ামী লীগ নেতার রিমাণ্ড শুনানিকালে বিচারকের সাথে আইনজীবী সুলভ আচরণ না করার অভিযোগে এজলাস ত্যাগ করেছেন সাতক্ষীরার আমলী-৩ নং আদালতের বিচারক মারুফা আক্তার। আজ মঙ্গলবার সকালে এজলাস ত্যাগের পর দিনভর ওই আদালতের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বিচারপ্রার্থীরা পড়েন দুর্ভোগে।

সাতক্ষীরা জজ কোর্টের কয়েকজন আইনজীবী জানান, গত বছরের ৫ আগষ্ট সরকার পতনের দিন আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকির হোসেনের গুলিতে হিজলিয়া গ্রামের রহিম আলী সরদারের ছেলে আলমসহ তিনজন মারা যান। গুলিতে আহত হন আরো সাতজন। এ ঘটনায় নিহত আলমের বাবা রহিম আলী বাদি হয়ে ওই বছরের ১৫ আগষ্ট জাকির হোসেনসহ অজ্ঞাতনামা ১৫ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় সন্ধিগ্ধ আসামী হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শ্রীউলা ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা শাকিলের মঙ্গলবার পৌনে ১১টায় আমলী আদালত-৩ এ রিমা- শুনানী শুরু হয়।

সাত দিনের রিমাণ্ড শুনানিতে অংশ নেন মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা আশাশুনি থানার পুলিশ পরিদর্শক আব্দুল ওয়াদুদ, আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিদর্শক বিশ্বনাথ রায়, রাষ্ট্রপক্ষের পিপি অ্যাড, আব্দুস সাত্তার, জেলা আইনজীবী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা জাতীয়তাবাদি আইনজীবী ফোরামের সদস্য অ্যাড. নুরুল আমিনসহ কমপক্ষে ২৫ জন আইনজীবী। আসামীপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. এম.শাহ আলমসহ কয়েকজন। উভয়পক্ষের শুনানী শেষে বিচারক মারুফা আক্তার আসামী আবু হেনা শাকিলকে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক দিনের রিমাণ্ড মঞ্জর করেন।

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের সঙ্গে শুনানিতে অংশ নেওয়া অ্যাড. নুরুল আমিন বিচারককে উদ্দেশ্য করে বলেন, তিনি ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার দোসর, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তার নিয়োগ, তিনি ওই চেয়ারে বসার যোগ্য নন। এ ধরণের একটি স্পর্শকাতর মামলায় কেন আবু হেনা শাকিলকে কারাফটকে রিমাণ্ড মঞ্জুর করলেন তা তাদের জানতে বাকী নেই। একপর্যায়ে বিচারক ১১টার দিকে এজলাস ছেড়ে নিজের খাস কামরায় চলে যান। বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত ওই বিচারক এজলাসে না ওঠায় বিচারপ্রার্থীদের বিচার কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় বাড়ি চলে যেতে হয়। এটা বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ ছাড়া কিছু নয়।

কলারোয়া উপজেলার বাটরা গ্রামের ওহিদুজ্জামান সুমন ও দাউদ হোসেন জানান, তারা কলারোয়া থানার একটি মারপিটের মামলায় এজাহারভুক্ত আসামী হিসেবে আইনজীবীর মাধ্যমে মঙ্গলবার আমলী-৩ নং আদালতে আত্মসমর্পণ করার আবেদন করেন। আশাশুনি থানার একটি হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা আবু হেনা শাকিলের রিমাণ্ড শুনানি নিয়ে বিচারক মারুফা আক্তার সকাল ১১টায় এজলাস ত্যাগ করায় তাদেরকে বাড়ি ফিরে আসতে হয়। আবারো তাদেরকে আগামিকাল বুধবার আদালতে হাজির হতে হবে। এটা তাদের দুর্ভোগ ছাড়া কিছু নয়।

আমলী-৩ আদালতের বেঞ্চ কর্মকর্তা ( পেশকার) মাহাদী হাসান জানান, মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে বিচারক এজলাস ত্যাগ করার পর তিনি নির্ধারিত সময় বিকেল সাড়ে তিনটার মধ্যে এজলাসে আসেননি। ফলে আশাশুনি ও কলারোয়া থানার যে সব আসামীর জামিন শুনানী, রিমাণ্ড শুনানিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম হয়নি তা আগামিকাল বুধবার শুনানী হবে।

এ ব্যাপারে অ্যাড. নুরুল আমিন বলেন, বিচারক একটি স্পর্শকাতর হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা আবু হেনা শাকিলের থানা হেফাজতে রিমাণ্ড মঞ্জুর না করে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেওয়াটা তারা মেনে নিতে পারেননি। সেকারণে তিনি ওই বিচারককে উদ্দেশ্য করে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের দোসর বলেছেন। তিনি ওই চেয়ারের জন্য যোগ্য নয় বলে মনে করেন। এ কারণে ওই আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকলে সেটা দুর্ভাগ্য ছাড়া কিছু নয়। তবে এ ঘটনায় তারা ওই বিচারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে বুধবার জেলা আইনজীবী সমিতির সামনের প্রতিবাদ কর্মসুচি পালন করবেন।

সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এম শাহ আলম বলেন, একজন আইনজীবীর আদালতে অশোভন আচরণ ও আইনজীবীসুলভ আচরণ না করায় বিচারক এজলাস ছেড়ে চলে যান।

সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. আব্দুস সাত্তার জানান, তিনি রাষ্ট্রপক্ষে দাঁড়িয়ে রিমাণ্ড শুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন। অ্যাড. নুরুল আমিন বিচারককে উদ্দেশ্য করে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরসহ কয়েকটি কথা বলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বিষয়টি নিয়ে ওই আদালতের কার্যক্রম বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে কিনা তা তিনি জানেন না।

সাতক্ষীরা বিচারিক আদালতের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন বিচারক মারুফা আক্তারের বরাত দিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আদালত থেকে বিচারক নেমে যাওয়ার পর শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি আর এজলাসে উঠতে পারেননি।